দেশের স্বাস্থসেবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভেজাল ও নকল ওষুধ। ওসব ওষুধ সেবনে দেশে বাড়ছে মৃত্যুর হার। ভেজাল ও নজল ওষুধ খেয়ে হঠাৎ করে কিংবা স্থায়ীভাবে কিডনি বিকল এবং ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পুরাতন ঢাকার মিটফোর্ডে ওষুধের বৃহত্তম মার্কেট থেকে একটি অসাধু সিন্ডিকেট রাজধানীসহ সারা দেশে ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করছে। মূলত ওই সিন্ডিকেটই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাত করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, জেনেশুনে এ ধরনের জঘন্য কাজ করা হত্যাকাণ্ডের সমান অপরাধ। অসাধু চক্রটি দেশের নামিদামি কোম্পানিগুলোর ওষুধের পাশাপাশি বিদেশি ওষুধেরও বেশি নকল করছে। অভিযোগ রয়েছে তাদের সঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে প্রায় ৯০ ভাগ দোকানেই ফার্মাসিস্ট নেই। অথচ ফার্মাসিস্টদের দায়িত্ব ওষুধ বিক্রয়, বিতরণ ও সংরক্ষণ করা। কিন্তু দেশে বছরের পর বছর চলে আসছে ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের এবং এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে নৈরাজ্য। যদিও ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে দাবি করা হলেও বাস্তবে ওই ব্যাপারে দৃশ্যমান কিছই চোখে পড়ছে না। বরং কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কতিপয় নেতাও ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রয়ে ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করছে। কারণ তারা বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায়।
সূত্র জানায়, অসাধু সিন্ডিকেট ডায়াবেটিস ওষুধের মধ্যে ইনসুলিন এবং এন্টিবায়োটিকসহ অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধের নকল তৈরি করে নির্বিঘ্নে বাজারজাত করে আসছে। মিটফোর্ড মার্কেট থেকে সারা দেশে যাচ্ছে ওসব ভেজাল ও নজল ওষুধ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়ি। ভেজাল ও নিম্নমানের প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে আশির দশকের শেষের দিকে ২ সহস্রাধিক শিশু কিডনি ও লিভার বিকল হয়ে মারা যায়। ওই প্যারাসিটামল ট্র্যাজেডির পরও নকল, ভেজাল ওষুধের বাজারজাত নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। বরং রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত আরো বেশি পরিমাণে সেগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দৃশ্যমান কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
সূত্র আরো জানায়, ভেজাল ও নকল ওষুধ খেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন কত লোকের মৃত্যু হচ্ছে ওই তথ্য কারো কাছে নেই। এমনকি এ নিয়ে প্রশাসনেরও কোনো মনিটরিং নেই। ফলে ভেজাল, নকল ওষুধ খেয়ে রোগীরা প্রতিনিয়ত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ওসব ওষুধ বাজারজাত বন্ধে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা জরুরি।
এদিকে এ বিষয়ে প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ জানান, ভেজাল ও নকল ওষুধ সেবনে হঠাৎ কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা বেশি। দেশে কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির এটাই অন্যতম কারণ। তাছাড়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলেও অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রির প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ভেজাল ওষুধ সেবনে বাড়ছে মৃত্যুর হার
- আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১১:৫৫:০৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৫ ১১:৫৫:০৯ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ